প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর সম্ভবত বৃষ্টি । বৃষ্টিতে ভেজা সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিগুলোর একটি । জানালা দিয়ে হাত বের করে প্রায় সবাই হাতে বৃষ্টির ফোঁটা ফেলি । কিন্তু কজনই বা এই বৃষ্টিবিন্দুর গতিবেগ নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি ?
মাঝারি আকারের মেঘগুলোর বসবাস মাটি হতে গড়ে ৮ কিলোমিটার উপরে । এত উচ্চতা হতে অভিকর্ষের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যখন পতিত হয়, তখন ভুপৃষ্ঠে পৌঁছার সময় এগুলোর বেগ হওয়ার কথা সেকেন্ডে প্রায় ৩৯৬ মিটারের মতো । এই বেগ যে কতটা বেশি ও ভয়ঙ্কর, একটি উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হবে । সাধারণ রাইফেলের বুলেটের গতিবেগ যেখানে শুরু হয় সেকেন্ডে ১৮০ মিটার থেকে, সেখানে বৃষ্টিবিন্দুর বেগ সেকেন্ডে ৩৯৬ মিটার ! বৃষ্টিবিন্দুগুলো এত উচ্চ বেগে ভূপাতিত হওয়ার কথা ছিল(হলে কী হতো তা পরে বলছি) , কিন্তু বাস্তবে তা হয় না । এত উচ্চবেগে না পড়ার মূল কারণ হলো সান্দ্রতা ।
কোনো প্রবাহী(যেমন তরল বা বায়ু) প্রবাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু বাধাগ্রস্থ হয় , তার পরিমাপই হলো সান্দ্রতা । ঘর্ষণ যেমন দুটি কঠিন পদার্থের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়, সান্দ্রতা তেমনি প্রবাহীর দুটি স্তরের আপেক্ষিক গতিতে বাধা দেয় ও গতি ব্যাহত করতে চেষ্টা করে । ঘর্ষণ বল নির্ভর না করলেও সান্দ্রতা বলের মান ঠিকই প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে । একারণে অপেক্ষাকৃত বড় আকারে ফোঁটায় সান্দ্রতা বল বেশি কাজ করে । তবে আকার বড় হওয়ার কারণে ফোঁটাটির ওজনও বেড়ে যায় । ফলে বৃষ্টিবিন্দুর নীট বেগ বৃদ্ধি পায় ।
আবার সান্দ্রতা সম্পর্কিত স্টোকসের সূত্র হতে সহজেই দেখানো যায় যে, বস্তুর উপর বাধাদানকারী বল তার বেগের সমানুপাতিক । অর্থাৎ কোনো সান্দ্র প্রবাহী, যেমন বাতাসের মধ্য দিয়ে যদি কোনো গোলক যেমন বৃষ্টির ফোঁটা অভিকর্ষের প্রভাবে পতিত হয়, তাহলে শুরুতে অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে এর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সাথে সাথে এর উপর বাধাদানকারী বলও বৃদ্ধি পেতে থাকবে, ফলে বৃষ্টিবিন্দুটির নীট ত্বরণ কমতে থাকবে । এক সময় নীট ত্বরণ শুন্য হয়ে যাবে এবং ফোঁটাটি ধ্রুব বেগ নিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হবে। এই বেগটি অবশ্য বিভিন্ন বইয়ে অন্ত্যবেগ নামে পরিচিত ।
অর্থাৎ বুঝাই যাচ্ছে , বৃষ্টিবিন্দুগুলো কত বেগে পতিত হবে তা আর মেঘের উচ্চতার উপর নির্ভর করছে না । বরং নির্ভর করছে তার আকারের উপর । মাঝারি রকমের বৃষ্টিপাতের(যে বৃষ্টিটা আরামদায়ক বলা যায়) সময় পতিত পানিবিন্দুগুলোর অধিকাংশেরই ব্যাসার্ধ হলো .২৫ থেকে ১.২৫ মিলিমিটারের মধ্যে । এখন তির্যক বায়ুপ্রবাহ না থাকলে , অন্ত্যবেগের ধারণা ব্যবহার করে ও সান্দ্রতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমীকরণের মাধ্যমে দেখানো যায় যে, .৫ মিলিমিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃষ্টিবিন্দু সেকেন্ডে প্রায় ৩০ মিটার বেগে মাটিতে পতিত হবে ।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি আর ৩৯৬মিঃ/সেঃ বেগে পতিত হয় না । বরং এমন একটি বেগে পতিত হয়, যে বেগ টিনের চালে অপূর্ব ছন্দের সৃষ্টি করে ; মানব মনে জাগিয়ে তোলে প্রেমভাব । এই পরিমিত বেগে বৃষ্টিবিন্দুপতন ঘটে বলেই সকলে , বিশেষতঃ কিশোর কিশোরীরা বৃষ্টিতে ভিজতে এত উন্মুখ থাকে ।
ভেজার সময় যখন কপোল বেয়ে বারিধারা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে, তখন যে অপূর্ব শিহরণ দেহে দোলা দিয়ে যায় তার বর্ণনা নাহয় নাই দিলাম । আর এই সান্দ্রতা না থাকলে বৃষ্টিতে বাড়ির চাল হয়তো সহজেই ক্ষয়ে যেত ; বৃষ্টিপতনের সুললিত ধ্বনিটা তখন শব্দদূষণে পরিণত হতো ।
প্রেমিকযুগল আর দুজন দুজনার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজার অপরূপ আনন্দখানি উপভোগ করতে পারতো না । চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, সান্দ্রতা না থাকলে বৃষ্টিপ্রেম শব্দটিরই উদ্ভব ঘটতো না, সৃষ্টি হতো না শত শত ভালোলাগার গান যেগুলোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল বৃষ্টি । এত এত কবি হয়তো বৃষ্টি আর প্রেম নিয়ে কোনো কাব্যই রচনা করতেন না, বরং কবি সুকান্ত হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বোমা বর্ষণের সাথে বৃষ্টির মিল খুঁজে বের করে একখানি কষ্টের কবিতা লিখে বসে থাকতেন ।
শিলাবৃষ্টি আমাদের নিকট যতটুকু ক্ষতিকর আর অবাঞ্চিত ঠেকে, আমাদের অতি প্রিয় বৃষ্টিও ঠিক ততটুকুই অনাবশ্যক আর অবাঞ্চিত হতো যদি সান্দ্রতা না থাকতো ।
কন্টেন্ট ক্রেডিট ঃ দীপ্ত আকাশ, www.bigganschool.org/blog/507
মাঝারি আকারের মেঘগুলোর বসবাস মাটি হতে গড়ে ৮ কিলোমিটার উপরে । এত উচ্চতা হতে অভিকর্ষের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যখন পতিত হয়, তখন ভুপৃষ্ঠে পৌঁছার সময় এগুলোর বেগ হওয়ার কথা সেকেন্ডে প্রায় ৩৯৬ মিটারের মতো । এই বেগ যে কতটা বেশি ও ভয়ঙ্কর, একটি উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হবে । সাধারণ রাইফেলের বুলেটের গতিবেগ যেখানে শুরু হয় সেকেন্ডে ১৮০ মিটার থেকে, সেখানে বৃষ্টিবিন্দুর বেগ সেকেন্ডে ৩৯৬ মিটার ! বৃষ্টিবিন্দুগুলো এত উচ্চ বেগে ভূপাতিত হওয়ার কথা ছিল(হলে কী হতো তা পরে বলছি) , কিন্তু বাস্তবে তা হয় না । এত উচ্চবেগে না পড়ার মূল কারণ হলো সান্দ্রতা ।
কোনো প্রবাহী(যেমন তরল বা বায়ু) প্রবাহিত হওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু বাধাগ্রস্থ হয় , তার পরিমাপই হলো সান্দ্রতা । ঘর্ষণ যেমন দুটি কঠিন পদার্থের আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়, সান্দ্রতা তেমনি প্রবাহীর দুটি স্তরের আপেক্ষিক গতিতে বাধা দেয় ও গতি ব্যাহত করতে চেষ্টা করে । ঘর্ষণ বল নির্ভর না করলেও সান্দ্রতা বলের মান ঠিকই প্রবাহীর স্তরদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে । একারণে অপেক্ষাকৃত বড় আকারে ফোঁটায় সান্দ্রতা বল বেশি কাজ করে । তবে আকার বড় হওয়ার কারণে ফোঁটাটির ওজনও বেড়ে যায় । ফলে বৃষ্টিবিন্দুর নীট বেগ বৃদ্ধি পায় ।
আবার সান্দ্রতা সম্পর্কিত স্টোকসের সূত্র হতে সহজেই দেখানো যায় যে, বস্তুর উপর বাধাদানকারী বল তার বেগের সমানুপাতিক । অর্থাৎ কোনো সান্দ্র প্রবাহী, যেমন বাতাসের মধ্য দিয়ে যদি কোনো গোলক যেমন বৃষ্টির ফোঁটা অভিকর্ষের প্রভাবে পতিত হয়, তাহলে শুরুতে অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে এর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সাথে সাথে এর উপর বাধাদানকারী বলও বৃদ্ধি পেতে থাকবে, ফলে বৃষ্টিবিন্দুটির নীট ত্বরণ কমতে থাকবে । এক সময় নীট ত্বরণ শুন্য হয়ে যাবে এবং ফোঁটাটি ধ্রুব বেগ নিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হবে। এই বেগটি অবশ্য বিভিন্ন বইয়ে অন্ত্যবেগ নামে পরিচিত ।
অর্থাৎ বুঝাই যাচ্ছে , বৃষ্টিবিন্দুগুলো কত বেগে পতিত হবে তা আর মেঘের উচ্চতার উপর নির্ভর করছে না । বরং নির্ভর করছে তার আকারের উপর । মাঝারি রকমের বৃষ্টিপাতের(যে বৃষ্টিটা আরামদায়ক বলা যায়) সময় পতিত পানিবিন্দুগুলোর অধিকাংশেরই ব্যাসার্ধ হলো .২৫ থেকে ১.২৫ মিলিমিটারের মধ্যে । এখন তির্যক বায়ুপ্রবাহ না থাকলে , অন্ত্যবেগের ধারণা ব্যবহার করে ও সান্দ্রতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমীকরণের মাধ্যমে দেখানো যায় যে, .৫ মিলিমিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃষ্টিবিন্দু সেকেন্ডে প্রায় ৩০ মিটার বেগে মাটিতে পতিত হবে ।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি আর ৩৯৬মিঃ/সেঃ বেগে পতিত হয় না । বরং এমন একটি বেগে পতিত হয়, যে বেগ টিনের চালে অপূর্ব ছন্দের সৃষ্টি করে ; মানব মনে জাগিয়ে তোলে প্রেমভাব । এই পরিমিত বেগে বৃষ্টিবিন্দুপতন ঘটে বলেই সকলে , বিশেষতঃ কিশোর কিশোরীরা বৃষ্টিতে ভিজতে এত উন্মুখ থাকে ।
ভেজার সময় যখন কপোল বেয়ে বারিধারা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে, তখন যে অপূর্ব শিহরণ দেহে দোলা দিয়ে যায় তার বর্ণনা নাহয় নাই দিলাম । আর এই সান্দ্রতা না থাকলে বৃষ্টিতে বাড়ির চাল হয়তো সহজেই ক্ষয়ে যেত ; বৃষ্টিপতনের সুললিত ধ্বনিটা তখন শব্দদূষণে পরিণত হতো ।
প্রেমিকযুগল আর দুজন দুজনার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজার অপরূপ আনন্দখানি উপভোগ করতে পারতো না । চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, সান্দ্রতা না থাকলে বৃষ্টিপ্রেম শব্দটিরই উদ্ভব ঘটতো না, সৃষ্টি হতো না শত শত ভালোলাগার গান যেগুলোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল বৃষ্টি । এত এত কবি হয়তো বৃষ্টি আর প্রেম নিয়ে কোনো কাব্যই রচনা করতেন না, বরং কবি সুকান্ত হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বোমা বর্ষণের সাথে বৃষ্টির মিল খুঁজে বের করে একখানি কষ্টের কবিতা লিখে বসে থাকতেন ।
শিলাবৃষ্টি আমাদের নিকট যতটুকু ক্ষতিকর আর অবাঞ্চিত ঠেকে, আমাদের অতি প্রিয় বৃষ্টিও ঠিক ততটুকুই অনাবশ্যক আর অবাঞ্চিত হতো যদি সান্দ্রতা না থাকতো ।
কন্টেন্ট ক্রেডিট ঃ দীপ্ত আকাশ, www.bigganschool.org/blog/507
No comments:
Post a Comment